মোঃ নিজাম উদ্দিন, চকরিয়া;

দেশের প্রথম সাফারি পার্ক—কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারায় এই প্রথমবারের মতো যুক্ত হলো বিলুপ্তপ্রায় একটি বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী “নীল গাই”। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) থেকে দর্শনার্থীরা উন্মুক্ত পরিবেশে প্রাণী দুটি উপভোগ করতে পারছেন।

অনেকেই প্রথমবার “নীল গাই” শুনে নীল রঙের কোনো গরু কল্পনা করলেও বাস্তবে এটি গরু নয়, বরং এটি এশিয়ার বৃহৎ প্রজাতির একটি হরিণজাতীয় প্রাণী। এর বৈজ্ঞানিক নাম Boselaphus tragocamelus। এক সময় ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বনাঞ্চলে এ প্রাণী দেখা যেত। কিন্তু পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে ১৯৪০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে নীল গাই আর দেখা যায়নি।

দীর্ঘ ৭৮ বছর পর ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ে ধরা পড়ে একটি স্ত্রী নীলগাই। এরপর ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি নওগাঁয় এবং ১ এপ্রিল পত্নীতলায় ধরা পড়ে আরও দুটি। ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারিতে ঠাকুরগাঁও থেকে উদ্ধার হয় আরেকটি। ধারণা করা হয়, ভারতের সীমান্ত এলাকা থেকে দলছুট হয়ে খাবারের সন্ধানে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে তারা।

বর্তমানে গাজীপুর সাফারি পার্কে এসব উদ্ধারকৃত নীল গাই সংরক্ষিত আছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সেই পার্কে নীল গাইয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১টিতে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা পঞ্চগড়ের জয়ধরভাঙ্গা এলাকায় একটি স্ত্রী নীল গাই উদ্ধার করে বিজিবি। শনিবার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মঞ্জুরুল আলমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সেটি গ্রহণ করতে পঞ্চগড় যায়। একই ট্রাকে গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে একটি পুরুষ নীল গাই এনে সোমবার সকালে উভয়টিকে ডুলাহাজারায় অবমুক্ত করা হয়।

সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মঞ্জুরুল আলম বলেন, “স্ত্রী নীল গাইটির শরীরে সামান্য আঁচড় থাকলেও পশুচিকিৎসক সেটিকে স্বাভাবিক ঘোষণা করেন। তার সঙ্গী হিসেবে একটি পুরুষ নীল গাই আনা হয়েছে। এখন থেকে দর্শনার্থীরা উন্মুক্ত পরিবেশে এই বিরল প্রাণী দুটি উপভোগ করতে পারবেন।”

চট্টগ্রাম বন বিভাগের উপবন সংরক্ষক আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ জানান, পঞ্চগড় থেকে উদ্ধারকৃত স্ত্রী নীল গাই এবং গাজীপুর থেকে আনা পুরুষ নীল গাই কক্সবাজারের ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে স্থায়ীভাবে রাখা হয়েছে। এই সংরক্ষণ প্রকল্প বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী রক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।